মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থলে এক সমৃদ্ধ জনপদের নাম ভৈরব। বাবু ভবানী কিশোর আচার্য চৌধুরী, মুক্তাগাছা জমিদারের নিয়ন্ত্রণ আসার পর তেজারতি, মনোহরী ও আড়তদারী ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ভৈরব বাজারের শ্রীবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ঘটে বহুগুণে। স্থানীয় মুসলমান ব্যবসায়ী ছাড়াও দূরাঞ্চলের অনেক হিন্দু পরিবার ভৈরব বাজারে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সওদাগর ও ব্যবসায়ী হিসেবে। ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ভৈরব অঞ্চলটি ছিল বাজিতপুর থানার আওতাধীন। ১৮৮৫ সালে মুক্তাগাছার জমিদারের রাজকাচারী কালিকাপ্রসাদ গ্রামের গরীবুল্লা মিয়ার বাড়ী থেকে ভৈরব বাজারে উঠে আসে। ভৈরব বাজার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলে ১৯০২ সালে আই জি এন কোম্পানী ভৈরব বাজারে অফিস এবং স্টীমার ঘাট স্থাপন করেন। এইসূত্রে বার্ক মায়ার কোম্পানী, ডেবিট কোম্পানী, রেলি ব্রাদার্স, আরসীম, লিলি ব্রাদার্স নামক সাহেবী কোম্পানী এবং প্রেম শুকদাস, জয়কিশোর, জাসমল তুলারাম এবং শুকিয়ে নাম মাড়োয়ারী কোম্পানী তাদের পাট ক্রয় কেন্দ্র খুলে ভৈরব বাজারকে একটি বিরাট বন্দরে পরিণত করেন। ১৯০৬ সালে ভৈরবে একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল থানাটি মান উন্নীত থানায় উন্নীত হয়। উক্ত বন্দরের সাথে দেশের অন্যান্য স্থানের রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে (১৯৩৫-১৯৩৭ খ্রি:) মেঘনা নদীর উপর “রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ সেতু” (যাহা ভৈরবপুল নামে পরিচিতি) স্থাপন করা হয় এবং এটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ৬৪ লক্ষ ভারতীয় মুদ্রা। আসাম বেংগল রেলওয়ে এই পুলের উপর দিয়ে প্রথম মালগাড়ী চলাচল শুরু করে ১৯৩৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর এবং তা উদ্ধোধন করেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের-এ-বাংলা এ,কে ফজলুল হক। ঐ বছরই ৬ ডিসেম্বর থেকে সেতুটির উপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। স্থাপন হয় ভৈরব বাজার জংশন। যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে নদীপথ, রেলপথ এবং রেলস্টেশন স্থাপন হওয়ার পর ভৈরবের ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ভৈরব বাজার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকাটি একটি সমৃদ্ধ ব্যবসা স্থান হিসেবে অর্থাৎ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কালের বিবর্তনে আজও ভৈরব বাজারটি টিকে আছে তার অতীত গৌরবকে অবলম্বন করে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS