ভৈরব এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠার সাথে সাথে মানুষের বিনোদনের জন্য খেলাধুলার চর্চা শুরু হয়। গ্রামীণ ও লৌকিক খেলাধুলার মধ্যে বউছি, একছেল্লা, চোরচোর, চোরপুলিশ, টুক্কুনি মার বকুনি, শাকভাত, কানামাছি, কুমীরখেলা, জোড়বেজোড়, কুৎ কুৎ, ছয়ঘুটি, ষোলঘুটি, বত্রিশঘুটি, চল্লিশঘুটি, বাঘবন্দী, গোল্লাছুট, সিন্ধুখেলা, ডাংঘুটি, হা-ডু-ডু, কাবাডি, দাড়িয়াবান্ধা, ইত্যাদি উল্লখযোগ্য! তাছাড়া ঘুড়ি উড়ানো, বানরের খেলা, মোরগের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই, গরুদৌড়, ঘোড়াদৌড়, নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ছিল জনপ্রিয়। আধুনিক খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল ভৈরববাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বৃটিশ রয়েল ইঞ্জিনীয়ার্স আর্মি ১৮৬০ সনে উপমহাদেশে ফুটবল খেলার প্রচলন শুরু করেন। ভৈরবে ষ্টীমার কোম্পানী, রেলকোম্পানী ও পাট ক্রয়ের সাথে জড়িত ইংরেজ কর্মচারিদের উৎসাহে ও অনুপ্রেরনায় প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে ভৈরবে ফুটবল খেলার সূত্রপাত হয়। বিশেষ করে ত্রিশের দশকে ভৈরবে অবস্থানকারী ইংরেজ কর্মচারি মিষ্টার বল্ডি, মিষ্টার আবডাল প্রমুখ এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মেঘনা ফেরীঘাটের দক্ষিণ পার্শ্বে রেলওয়ে ডি, টি, ও (কন্টোল) অফিস ও হাকিম শাহ ইনস্টিটিউট সংলগ্ন রেলওয়ে মাঠে নিয়মিত ফুটবল খেলার আয়োজন করা হতো। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এ দু’টি রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানসহ পুরো মাঠটি মেঘনা গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। ফুটবল খেলায় স্থানীয়ভাবে তখন যারা খেলোয়ারড়দের সংগঠিত করেছিল তাদের মধ্যে ডাঃ আঃ আলী অন্যতম। সম্ভবতঃ ১৯২৪ সালে তখনকার দূর্ধর্ষ খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল ধুমকেতু নামক একটি ফুটবল দল। এ দলটি অল্প সময়ের মধ্যে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে খ্যাতি অর্জন করেছিল। ধুমকেতুর খেলোয়াড়দের মধ্যে সৈয়দ লাল মিয়া, জিন্নাত আলী মিয়া, আঃ আহাদ মিয়া, আঃ মজিদ মিয়া, আঃ লতিফ, আঃ মন্নান, আঃ রশিদ, করম আলী মিয়া, আঃ রহিম, হাজী আম্বব আলী মিয়া, আলহাজ্ব সিরাজুল হক, জয়নাল মিয়া, শচীন্দ্র শীল, শীতল দেব, হাফেজ আহমেদ (রেলওয়ে টি,টি) টম টেনার (রেলষ্টেশন) গণি মিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। খেলা পরিচালনার জন্যে ১৯৩২-৩৩ সনের দিকে প্রথম ফুটবল কমিটি গঠিত হয়। ভৈরবের ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্য ১৯৩৭ সনের পাঁচশত ভরি রৌপ্যখচিত উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ‘‘শের-এ বাংলা মেমোরিয়াল চ্যালেঞ্জ শিল্ড টুর্নামেন্ট’’ । ১৯৬২ সনে আয়োজন করা হয় সর্ববৃহৎ পাঁচশত ভরি রৌপ্যখচিত এবং মেঘনা রেলসেতুর প্রতিকৃতি বহনকারী উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ‘‘শের-এ বাংলা মেমোরিয়াল চ্যালেঞ্জ শিল্ড টুর্নামেন্ট’’। দেশ বিদেশের অনেক খ্যাতনামা ফুটবল দল এ টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহণ করে। উল্লেখ্য যে, ২৮ বছর পর ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে ‘‘শের-এ বাংলা মেমোরিয়াল চ্যালেঞ্জ শিল্ড টুর্নামেন্ট’’ ভৈরব স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ক্রিকেট খেলাও ভৈরবে জনপ্রিয়। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ভৈরবে আখড়া বা আসর কেন্দ্রীক সংগীত জলসার প্রচলন ছিল। মনি-ঋষি, সাধু-সন্নাসী বা পীর ফকিরের আখড়াতে দেহতত্ত্ব, কীর্তন, বাউল, ভক্তিমুলক, শ্যামা সংগীত অনুশীলন হতো দোতারা, লাউয়া, একতারা এবং হারমোনিয়াম বাজিয়ে। ভৈরবে কবিগান এবং ঘেটুগানের প্রচলন শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে। এক সময় ’ভৈরব অপেরা’ নামে একটি যাত্রার দল গঠন করা হয়। ষাটের দশকের শেষ পর্যায়ে ‘সাংস্কৃতিক পরিষদ’ গঠিত হয়। ওস্তাদ ইসরাইল খাঁন সংগীত নিকেতন, শিল্পকলা পরিষদ, মেঘনা সাংস্কৃতিক একাডেমী, কাকলী খেলাঘর, থিয়েটার আর্ট, নিবেদিতা নাট্য গোষ্ঠী সংগঠন। সংস্কৃতি ও নাট্য চর্চায় ভৈরব যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস